Banar

আমি

‘নারীরা লড়াই করেছেন সমানতালে, এখন কেন আড়ালে’

‘নারীরা লড়াই করেছেন সমানতালে, এখন কেন আড়ালে’

বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক :: own-reporter

গণঅভ্যুত্থানে আন্দোলনে সরাসরি নেতৃত্বদানকারী ও আহত নারীরা বলেছেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সর্বস্তরে নারীদের ভূমিকা থাকা সত্ত্বেও, আন্দোলন পরবর্তী সময়ে সংস্কার কমিশনসহ রাষ্ট্রীয় সর্বক্ষেত্রে নারীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হয়নি। অতীতে যেমন নারীদের ভূমিকা অস্বীকার করে তাদের সবক্ষেত্রে বঞ্চিত করার সংস্কৃতি ছিল, তা এখনো অব্যাহত আছে।

শুক্রবার (২২ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে 'গণঅভ্যুত্থানের নারীদের সংলাপ: নারীরা কোথায় গেলো' শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তারা। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন লড়াকু ২৪ ও এমপাওয়ারিং আওয়ার ফাইটার্সের আয়োজনে এ আলোচনা সভায় অনুষ্ঠিত। 

এ সংলাপের উদ্বোধন করেন গণঅভ্যুত্থানে নিহত শিক্ষার্থী নাইমা সুলতানার মা আইনুন নাহার। মেয়ের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, মেয়ের পড়ালেখার জন্য আমরা গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে এসেছি। কিন্তু তার মৃত্যুতে আমাদের পরিবারের সব স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। শুরু থেকে সে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে ছিল। আমি যেতে বারণ করায়, আমার সঙ্গে অনেক ঝগড়া করেছে। জুলাই-আগস্টে শহীদদের গল্প পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করাসহ হত্যায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি ও নিহতদের যথাযথ মূল্যায়ন চান তিনি।

জুলাই-আগস্টে ছাত্র-আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাজিফা জান্নাত বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে এই সময় এসে নারীদের বলতে হচ্ছে যে, আমরাও আন্দোলনে ছিলাম। এখন আমাকে প্রশ্ন করা হয়, আপনারা এখন কই। এটা আসলে প্রশ্ন করা উচিত সেসব রাজনৈতিক দলগুলোকে যাদের ক্যাপাসিটি থাকা সত্ত্বেও কেন নারীদের অন্তর্ভুক্ত করা হলো না। 

তিনি আরও বলেন, পাওয়ার ডায়নামিকসে যারা আছেন, সে জায়গায় নারীদের প্রতিনিধিত্ব নেই এবং সেটা বাড়াতে হবে। নারীদের ভূমিকা তো নারীরা গিয়ে বলবেন না। এটার একনলেজমেন্ট রাষ্ট্রকেই করতে হবে। অতীতে আমরা বৈষম্যের স্বীকার হয়েছি বলেই সব ধরনের বৈষম্য নিরসনের জন্য আন্দোলন করেছিলাম।

ছেলেদের মহানায়ক করে দেখার চেষ্টা শুরু হয় এবং আমি একটা আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভুগতে থাকি মন্তব্য করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, আন্দোলনের এতদিন পর এটা পরিষ্কার যে মেয়েদের কর্নার করার একটা সফল চেষ্টা হয়েছে। ছেলেরা যখন আটক হচ্ছিল, আমরা মেয়েরা নেতৃত্ব দিয়েছি। কিন্তু ৫ আগস্টের পর আমি পুরোপুরি ভ্যানিশ হয়ে গেছি। 

তিনি আরও বলেন, আমি প্রথমে ভেবেছিলাম এটা শুধু বোধ হয় আমার সঙ্গেই হচ্ছে। কিন্তু সারা দেশের যেসব নারী শিক্ষার্থী আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন, তাদের প্রত্যেকের অভিজ্ঞতা একইরকম। শুধু তাই নয়, যারা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে, তাদের সোশ্যাল মিডিয়ায় টার্গেট করে হ্যারাস করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। যার কারণেও নারীরা কর্নার হয়ে গিয়েছেন।

চিকিৎসা সেবা দেয়ার সময়ের বর্ণনা করে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আহত প্রায় ১০০ জনকে মেডিকেল ক্যাম্প করে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া চিকিৎসক অর্থি জুখরিফ বলেন, সংস্কার কমিশনে নারীদের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে কম। আমরা বিশ্বাস করি এখানে সমানভাবে নারীদের উপস্থিতি থাকা উচিত, সেখানে যেন কোনো ধরনের বৈষম্য না থাকে।  আহতদের সেবা দিয়েছি পেশাগত ও সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে। সেসময় তার পরিচিত নারীরা যে যেভাবে পেরেছে সাহায্য করেছে।

যেসব ফুটেজ আমরা অন এয়ার করতে পারিনি, আমরা সেগুলো বিদেশি মিডিয়াকে সরবরাহ করেছি মন্তব্য করে আন্দোলনের সময় আহত বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল২৪ এর সাংবাদিক শামীমা সুলতানা লাভু বলেন, সাধারণ মানুষ জানে না গণমাধ্যমের সব সিদ্ধান্তে মাঠের সাংবাদিকদের কোনো ভূমিকা থাকে না। তখনকার প্রেস সেক্রেটারি অফিসে অফিসে গিয়ে মনিটরিং করেছে। আমাদের চ্যানেল সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধও করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আমরা থেমে থাকিনি। গণমাধ্যমকে অনেকে দালাল বলে চিহ্নিত করে। কিন্তু এর সংখ্যা খুবই নগণ্য। কিন্তু সব দায়টাই এসে পরে সব সাংবাদিকদের ওপর এবং তারা জনগণের রোষানলে পড়েন। 

উপদেষ্টা পরিষদে কোনো নারী শিক্ষার্থী রাখা হয়নি বলে আক্ষেপ প্রকাশ করে বরিশালের আন্দোলনে অংশ নেয়া বরিশাল সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস নীতু বলেন, আন্দোলনে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের সমান ভূমিকা থাকার পরও, আন্দোলন পরবর্তী সময়ে নারীদের মাইনাস করার চেষ্টা হচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মূল কমিটিতে একজন নারী শিক্ষার্থীকে স্পোকসপারসন হিসেবে রাখা হলেও, প্রেস রিলিজ বা অন্যান্য কাজকর্মে তাকে আমরা দেখছি না, যা খুবই হতাশার। 

আন্দোলনে কয়েক দফায় আহত হওয়া কামরাঙ্গীরচর এলাকার দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সামিয়া আক্তার জান্নাত বলেন, অভ্যুত্থানে নারীদের যে ভূমিকা ছিল তা ঠিকভাবে স্বীকার করা তো দূরের কথা, তাদেরকে আরও বাদ দেওয়া হচ্ছে, যা মূলত বৈষম্যের জন্ম দিচ্ছে। 

সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না মন্তভ্য করে আশুলিয়ায় আন্দোলনে অংশ নেয়া নারীশ্রমিক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, অনেকেই বলছেন ছাত্রদের আন্দোলন ছিল গণ-অভ্যুত্থানে। কিন্তু এতে শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে নারী শ্রমিকরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন এবং অনেক নারী আহত-নিহত হন, যা এখনো অবধি সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। 

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাবরিনা আক্তার বলেন, আন্দোলনের শুরু থেকেই ছেলেদের মতো মেয়েদের ভূমিকা ছিল। কিন্তু অতীতের মতো নারীদের ক্ষেত্রে যে বৈষম্য ছিল, সেটা এখনো অব্যাহত আছে। 

বাংলাদেশ জার্নাল/কেএইচ

© Bangladesh Journal


from BD-JOURNAL https://www.bd-journal.com/bangladesh/279892/নারীরা-লড়াই-করেছেন-সমানতালে-এখন-কেন-আড়ালে

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
Below Post Responsive Ads code (Google Ads)

buttons=(Accept !) days=(20)

https://oodruhoufouzair.com/4/7922562
Accept !